বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:করোনা সংক্রমিতদের সেবা বা পরিষেবা দিতে গিয়ে কোনও সরকারি আধিকারিক বা কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারের একজনকে এবার চাকরি দেবে রাজ্য সরকার। বুধবার নবান্নে এ কথা জানালেন পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কী ভাবে কোথায় এই চাকরির ব্যবস্থা করা হবে, তা ঠিক করতে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং অর্থ সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীই এদিন জানিয়েছেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে রাজ্য সরকারের ৪১৫ কর্মী–আধিকারিক সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিক ও কর্মী, পুলিশ আধিকারিক ও কর্মী, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রমুখ। সংক্রমিতদের মধ্যে ৪০৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। তিনি জানান, মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আর সংক্রমিতদের দেওয়া হচ্ছে ১ লক্ষ টাকা করে। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যে ২৮৪ জনকে টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাতে সরকারের খরচ হয়েছে ৫.২৩ কোটি টাকা। আরও ১৯৯ জন দ্রুত টাকা পেয়ে যাবেন।
তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আমফানের দুর্নীতি নিয়ে বিরোধী দলগুলি প্রতিবাদে সরব হওয়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এদিন কোনও দলের নাম না করেই বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের দল থেকে বের করে দিতে বলেছি। তার পরও এরা থামছে না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনও কোনও রাজনৈতিক দল বেশি বাড়াবাড়ি করছে। মনে রাখবেন, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম।’ কিন্তু নবান্ন থেকে এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক মন্তব্য করতে পারেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও এমন কাজ বহুবার করেছেন। সুতরাং এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। দুর্নীতিগ্রস্তদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিরোধী দলগুলিও জানিয়েছে, তাঁর নির্দেশ আসলে আইওয়াশ। সত্যি যদি তাঁদের শাস্তি দিতে হয়, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করুক প্রশাসন।
এদিকে, এবার করোনা সংক্রমণ পৌঁছে গেল বেহালার গঙ্গোপাধ্যায় বাড়িতেও। জানা গিয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও সংক্রমিত হয়েছেন। আপাতত বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়–সহ তাঁর পরিবারের সকলেরই করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে রিপোর্ট এখনও আসেনি। তাঁরা সকলেই এখন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। উল্লেখ্য, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ও বাঁ হাতি ক্রিকেটার হিসেবে বেশ নাম করেছিলেন। বাংলার হয়ে বহু ম্যাচ খেলেছেনও। এর আগেও তাঁর করোনা সংক্রমণ নিয়ে খবর শোনা গিয়েছিল। পরে জানা গিয়েছিল, তা ছিল নেহাতই গুজব। এবার কিন্তু সত্যি সত্যিই তাঁর সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেল।
পাশাপাশি, এদিন শেষ ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীর ৪২৫ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। ফলে কলকাতায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭৫ জন। স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ বুলেটিন থেকে এই খবর পাওয়া গিয়েছে। বুলেটিন থেকে আরও জানা গিয়েছে, এদিন ২২৫ জন মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ফলে শহরে করোনা মুক্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৬ হাজার ১৪৬ জন। তবে এদিন করোনা সংক্রমিত হয়ে শহরে মৃত্যু হয়েছে আরও ৯ জনের। ফলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫২৫ জন।
একই সঙ্গে রাজ্যেও দৈনিক সংক্রমণ কিন্তু বাড়ছেই। শেষ ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছেন ১ হাজার ৫৮৯ জন। ফলে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৪২৭ জন। পাশাপাশি রাজ্যে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা হল ১ হাজার। এদিন মারা যান ২০ জন। এদিন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ৭৪৯ জন। এখনও পর্যন্ত একদিনে সুস্থ হওয়ার সংখ্যায় এটাই সর্বোচ্চ। ফলে রাজ্যে করোনা মুক্তের মোট সংখ্যা দাঁড়াল ২০ হাজার ৬৮০ জন। ফলে রাজ্যে সুস্থতার হার ৬০.০৬ শতাংশ।